নির্বাচন ২০২৪

দ্বাদস জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মোট খরচ কত?

মুক্তমন ডেস্ক : বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রিজাইডিং-পোলিং অফিসারসহ নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দু’দিনের সম্মানী ভাতা দেয়া হবে। এর ফলে আগের নির্বাচনের তুলনায় এবারে ব্যয় হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশী অর্থ।

প্রাথমিকভাবে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচনের ব্যয় দু হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ইতোমধ্যেই সরকার এই জন্য সাতশ কোটি টাকার বেশি ছাড় করেছে, যা নির্বাচন কমিশন জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে বরাদ্দ দিয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন কর্মকর্তাদের দুদিনের সম্মানীর সাথে প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণে দাম বৃদ্ধির কারণে স্বাভাবিকভাবেই এবার ব্যয় বাড়ছে।

“পোলিং এর সাথে জড়িত কর্মকর্তারা এবারের নির্বাচনে একদিনের বদলে দুদিনের সম্মানী পাবেন”, বলছিলেন তিনি।

তবে বেসরকারি পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান জানিপপের চেয়ারম্যান প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমউল্ল্যাহ বলছেন সব দল না আসায় এ নির্বাচনে ঝুঁকি বেশি এবং সে কারণেই ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জড়িত কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত প্রণোদনা দেয়ায় ব্যয় বেড়ে গেছে।

কমিশনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসারসহ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দেশ জুড়ে প্রায় নয় লাখ কর্মকর্তা নির্বাচনের কাজ করবেন।

প্রসঙ্গত, আগামী সাতই জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিরোধী দল বিএনপিসহ অনেকগুলো রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি-সহ তাদের সমমনা ও মিত্র দলগুলো এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

একজন ম্যাজিস্ট্রেটের জন্যই ব্যয় হবে ৫০ হাজার
ইতোমধ্যে যে সব জায়গায় নির্বাচনের খরচ নির্বাহের জন্য নির্বাচন কমিশন টাকা ছাড় দিয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসাররা এবার একদিনের বদলে দুদিনের সম্মানী ভাতা পাবেন।

একদিনের জন্য প্রিজাইডিং অফিসার চার হাজার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার তিন হাজার ও পোলিং অফিসার দুই হাজার করে টাকা পাবেন। এছাড়া যাতায়াত ভাড়ার জন্য তারা সবাই অতিরিক্ত জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে পাবেন।

এছাড়াও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোট প্রদানের গোপন কক্ষ ও বেষ্টনীর জন্য প্রতিটি কক্ষের জন্য আটশ টাকা করে দেয়া হবে।

প্রায় বারো কোটি ভোটারের এবারের নির্বাচনে সারা দেশে তিনশ সংসদীয় আসনের মোট কেন্দ্র থাকবে ৪২ হাজারেরও বেশি।

এছাড়াও ব্যালট পেপার আনা-নেয়া, রিটার্নিং অফিসারের সহায়ক কর্মকর্তাদের যাতায়াত ছাড়াও সারা দেশে যে সব ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনের দিন কাজ করবেন তারাও ভাতা পাবেন।

ম্যাজিস্ট্রেট বা ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা সম্পন্ন কর্মকর্তারা নির্বাচনের আগে ও পরের দুই দিনের সহ মোট পাঁচ দিনের জন্য দিনে জনপ্রতি নয় হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। এছাড়া স্টাফ ভাতা হিসেবে তারা প্রতিজন প্রতিদিনের পাবেন আরও এক হাজার টাকা।

অর্থাৎ একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মানী বা নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের জন্য ভাতা দিতে নির্বাচন কমিশনের ব্যয় হবে ৫০ হাজার টাকা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে দায়িত্ব পালনের জন্য ইতোমধ্যেই ৮৩৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। আরও ১৯০৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট সরকারের কাছে চেয়েছে কমিশন। এছাড়া দেশের আট বিভাগে আরও প্রায় এগারশ ম্যাজিস্ট্রেট কর্মরত আছেন।

তারা ৫-৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় কাজ করবেন। মূলত ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট পরিচালনা ছাড়াও নির্বাচনকালে প্রয়োজন হলে সেনা সদস্যরাও ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে কাজ করবেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী ১০ই জানুয়ারি পর্যন্ত মোট তেরো দিন তারা দায়িত্ব পালন করবেন।

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি জেলা, উপজেলা, মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করবে। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধক্রমে ও সমন্বয়ের মাধ্যমে বাহিনীগুলো এলাকাভিত্তিক মোতায়েন সম্পন্ন করছে।

এছাড়া পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, বিজিবি, র‍্যাব ও কোস্টগার্ড সদস্যরা নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন।

অশোক কুমার দেবনাথ আগেই বলেছিলেন যে এবার ভোটার সংখ্যা বাড়ার কারণে সারা দেশে ভোটকেন্দ্রও বেড়েছে এবং সে কারণে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যয়ও বাড়বে।

প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমউল্ল্যাহ বলছেন এবারের নির্বাচনে ঝুঁকি বেশি থাকায় ভোট গ্রহণের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের জন্য বিষয়টি বেশী চ্যালেঞ্জিং।

“সব দল অংশগ্রহণ করলে হয়তো এই বিশাল ব্যয়েরও কিছু যৌক্তিকতা থাকতো। দুটি বড় দল নির্বাচনে নেই এবং তারা ভোট বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। সে কারণে কর্মকর্তাদের জন্যও কাজটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠেছে। ফলে তাদের প্রণোদনাও দিতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে”, বলছিলেন তিনি।

আগের নির্বাচনগুলোতে খরচ কেমন ছিল?
নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য মোট বরাদ্দ ছিলো সাতশ কোটি টাকার মতো। যদিও পরে তা কিছুটা বেড়েছিলো।

ওই নির্বাচন বিএনপি ও সমমনা দলগুলো অংশ নিয়েছিলো।

এর আগে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিলো বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল। সে নির্বাচনের জন্য মোট খরচ হয়েছিলো প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা।

আর ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য ব্যয় হয়েছিলো প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা।

কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন ব্যবস্থাপনা ও নির্বাচনী নানা উপকরণের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণেই ক্রমশ নির্বাচনের খরচ বাড়ছে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button